Latest Textile | Zakia Sultana
"শাড়িতে নারী" কথাটির সাথে বর্তমান যুগের প্রতিটি মানুষ ঠিক যতটা পরিচিত ঠিক তেমনি প্রতিটি নারীদের এক অন্যরকম আকর্ষণ বোধ কাজ করে শাড়ি শব্দটির সাথে। বর্তমান যুগের নিত্যদিনের প্রচলিত পোষাকের মাঝে শাড়িতে নিজের এক আলাদাই সৌন্দর্য উদ্ভাবন করে প্রতিটি নারী। শাড়ি বাঙালির পরিচয়ের সাথে মিশে আছে বাঙালির অহংকার হয়ে।
আজ সেই শাড়ির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (History of Saree) জেনে নেবো...
|
প্রাচীনতম |
➤বাঙালি ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে অষ্টম শতাব্দীতে শাড়ি ছিল প্রাচীন ভারতের প্রচলিত পোশাক। যেখানে তখনকার মেয়েরা আংটি, দুল, হার এসকল অংলকারের সঙ্গে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত শাড়ি পরিধান করত, এবং উপরে জড়ানো থাকত আধনা (আধখানা)। পাহাড়পুর থেকে প্রাপ্ত পাল আমলের কিছু ভাস্কর্য অনুমান করে এ ধারণা করা যায়। এ থেকেই ধারনা পাওয়া যায় যে শাড়ি ছিলো অষ্টম শতাব্দী থেকে জনপ্রিয় এক পোশাক।
➤সম্ভবত ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীন পরিহিত পোশাক গুলোর মাঝে শাড়ি অন্যতম। যার ব্যবহার ও পরিচিতি আজও পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। কীভাবে শাড়ির উৎপত্তি হয়েছিলো সে সম্পর্কে ইতিহাস এখনো সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়৷ যুগে যুগে শাড়ির পরিধেয় ভঙ্গিমা ও বুনন কৌশল, আঁচল, পার এর হয়েছে পরিবর্তন৷
➤শাড়ি শব্দটি সংস্কৃত শাটী হতে উদ্ভুত, যার অর্থ 'কাপড়ের টুকরা' এবং পালি শব্দ शाडी এবং যা আধুনিক ভারতীয় ভাষায় শাড়ি হিসাবে পরিণত হয়েছে।
➤ নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত চর্যাপদে সরাসরি শাড়ি শব্দের উল্লেখ না থাকলেও অনুরূপ পোশাকের আভাস পাওয়া যায়।
➤প্রাচীন ভারতে সেলাই করা পোশাক পড়ার রীতি ছিলোনা৷ সেলাই করার বিধান না জানায় সেলাইবিহীন অখণ্ড কাপড় পরিধান করাই ছিলো শাস্ত্রীয় বিধান । যা শাড়ি ও ধুতি নামে পরিচিতি লাভ করে৷
|
প্রাচীন যুগে শাড়ি
|
➤উক্ত যুগে আনুমানিক ৩০০-৫০০সাল পর্যন্ত বিখ্যাত কবি কালিদাসের রচনায় নারীদের শাড়ি পরার কথা উল্লেখ আছে। উক্ত আমলের কিছু গুহা চিত্র থেকে শাড়ির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।।তাছাড়া পাহাড়পুর, ময়নামতি, পোড়ামাটির ফলক এগুলোর চিত্র থেকেও বোঝা যায় হাজার বছর আগে শাড়ির প্রচলন ছিলো৷
➤মোঘল সম্রাটের সময়ে শাড়ি অতি প্রচলিত পোশাক ছিলো। মোঘলরা মসলিন শাড়ির সূত্র ধরেই পূর্ব ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা ঘাটি গড়ে তুলেছিলো। সেসময় মসলিন কাপড় সংগ্রহ করার জন্য সরকারি লোক নিয়োগ দেওয়া হতো। আর সম্ভবত মোঘল সময়েই শাড়ির সাথে সাথে ব্লাউজ পরিধানের রীতি চালু হয়। তবে সেসময় শাড়ি পরা হতো এক প্যাঁচে৷
➤১৯ শতক থেকে বিংশ শতাব্দীকে ভিক্টোরিয়ার যুগ বলা হয়ে থাকে। সেসময় রীতি ছিলো কাপড় দিয়ে সারা শরীর ঢাকা থাকবে৷ এসময়ই শাড়ির নানান ফ্যাশনের শুরু হয়। এবং শাড়ির সাথে ব্লাউজ ও পেটিকোট পড়ার চল শুরু হয়৷ তখন থেকেই বাঙালিরা এক প্যাঁচে শাড়ি পরার রীতি কে পাল্টে দেয়৷
➤শাড়ি বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে পেচিয়ে পড়া যেতে পারে, যদিও কিছু শৈলীর জন্য নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য বা আকারের শাড়ি প্রয়োজন। শাড়ির ইতিহাসবিদ এবং স্বীকৃত বস্ত্রশিল্প পন্ডিত রতা কাপুর চিশতি তার "শাড়িস:ট্র্যাডিশন অ্যান্ড বিয়ন্ড" গ্রন্থে শাড়ি পরিধানের ১০৮টি পদ্ধতি নথিভুক্ত করেছেন।
➤শাড়ি পরার আধুনিক শৈলী এসেছে ঠাকুর পরিবার থেকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী বোম্বেতে অধ্যয়নকালে থাকার পর কলকাতায় শাড়ি পরার শাড়ি ভিন্ন শৈলীর প্রচলন ঘটান। এই পদ্ধতির জন্য শাড়ির নিচে সেমিজ বা জ্যাকেট (ব্লাউজের পুরাতন নাম) এবং পেটিকোট পরার প্রয়োজন ছিল এবং এই পোশাকে তৎকালীন নারীদের অন্তরমহল থেকে বাইরে আসার প্রচলন ঘটেছিল।
|
ব্রিটিশদের সাথে |
➤ব্রিটিশদের সাথে ক্রমবর্ধমান কথোপকথনে দেখা গিয়েছিল যে রাজপরিবারের বেশিরভাগ মহিলারা ১৯০০-এর দশকে পর্দা প্রথা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। কোচবিহারের মহারাণী ইন্দিরা দেবী শিফন শাড়ি জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।
➤পাকিস্তানের আমল শুরুর থেকেও কমেনি শাড়ির প্রচলন এদেশে। শাড়ির বিভিন্ন স্টাইল ও রুপ আমরা দেখতে পাই ষাট এর দশক থেকে। তখন থেকেই সাজ ও পোষাক নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট শুরু হয়৷ পাশাপাশি এসময় সিল্কের শাড়ির প্রচলন ও শুরু হয়। তবে প্রায় আশির দশকে নানা বিধ শাড়ির উৎপত্তি ও প্রচলন শুরু হয়৷ তখনি জরজেট, জামদানি, কাতান ও সুতি এমন নানাবিধ কাপড় উদ্ভাবনের যাত্রা শুরু হয় এবং এসব কাপড়ের শাড়ি প্রচুর প্রচলন লাভ করে।
ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতীক হিসাবে ভারতে এবং বাংলাদেশে অনেক পাঁচতারা-বিলাসবহুল হোটেলের মহিলা কর্মীরা ইউনিফর্ম হিসাবে শাড়ি পরেন।
➤শাড়ি বাংলাদেশী নারীদের জাতীয় পোশাক। বিবাহিত অধিকাংশ নারী তাদের নিত্য পোশাক হিসাবে এবং অবিবাহিত মেয়েরা প্রায়শই শাড়ি পরে থাকেন। যদিও ঢাকাই জামদানি (হাতে বোনা শাড়ি) বিশ্বব্যাপী পরিচিত এবং শাড়ি পরেন এমন সমস্ত নারীর কাছে সর্বাধিক পরিচিত। এছাড়াও বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ: রেশম, তাঁতের রেশম শাড়ি ও তাঁতের সুতি শাড়ি, ঢাকাই বেনারসি, রাজশাহী রেশম, টাঙ্গাইল, পাবনা, তসর রেশম, মণিপুরী এবং কাতান শাড়ি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়।
এভাবেই বিশ্ব দরবারে আজ শাড়ি একটি জনপ্রিয় এবং বাঙালির নিজস্ব পোশাক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যা নিয়ে বাঙালিরা সর্বদাই গর্ববোধ করে থাকে।
তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া ও কিছু অন্যান্য ওয়েবসাইট লেখকঃ
জাকিয়া সুলতানা
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং
ড. ওয়াজেদ মিয়াহ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। (DWMTEC)
0 মন্তব্যসমূহ