রেশম থেকে সিল্ক হওয়ার ছোটগল্প - Life of Silk Fiber


Latest Textile | Farzana Akter Keya

প্রাকৃতিক সুতার মধ্যে সিল্ক সুতা হলো অন্যতম। আমি আজ সিল্ক সুতা ও সিল্কের জীবন নিয়ে কথা বলবো। 

তো প্রথমেই আমাদের জানতে হবে-  

◼সিল্ক কি (What is Silk) ?

সিল্কই প্রকৃতি প্রদত্ত একমাত্র সুতা (খুব সূক্ষ্মভাবে বলতে গেলে ফাইবার বা আঁশ) যা অবিচ্ছিন্ন। সাধারণত তুলা/কটন (Cotton), হেম্প (Hemp), লিনেন (Linen) বা ঊল (Wool) যে ফাইবারের কথাই বলি না কেন, সকলেরই একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য আছে যা তুলনায় অধিক ছোট। 
রেশম পোকা থেকে সিল্ক সুতা পাওয়া যায়।     

◼রেশম পোকার জীবনচক্র:

রেশম পোকার জীবনে চারটি পর্যায়ে বিভক্ত। এই পর্যায় চারটি হলো‒ 

১.ডিম (Egg)
২.শূককীট (Larva), 
৩.মূককীট (Pupa) ও 
৪.পূর্ণাঙ্গ পোকা (Adult Moth)। 

পূর্ণাঙ্গ দশার পোকাকে সাথারণভাবে মথ (moth) বলে।

রেশম পোকা নিশাচর। এদের গায়ের রঙও অনুজ্জ্বল। স্ত্রী মথ গাছের পাতার উপরে চলার সময় প্রায় ৪০০- ৫০০ ডিম পাড়ে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়ার শেষে স্ত্রী মথ মারা যায়। ডিমের রঙ ফ্যাকাশে হলুদ। ৮-৯ দিনের মাথায় ডিমের গায়ে কালো কালো দাগ পড়ে। প্রায় ১০ দিনের দিকে পুরো ডিম কালচে হয়ে যায়। এরপর ১১-১২ দিনের মাথায় ডিম ফুটে শূককীট বের হয়। শূককীটের প্রাথমিক দশায় পুল বলা হয়।প্রাথমিক দশায় এদের গায়ের রঙ থাকে হাল্কা বাদমী আভাযুক্ত সাদা। এরা অত্যন্ত ক্ষুধার্ত থাকে। এরা প্রচুর পরিমাণ তুঁত গাছের পাতা খেয়ে বড় হতে থাকে। এই সময় এরা দিনে প্রায় ১১-১৩ বার তুঁত পাতা খায়। এরপর ১৮-২৪ ঘণ্টা নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে। এরপর এরা দেহের খোলস পাল্টায় এবং আবার তুঁত পাতা খাওয়া শুরু করে। এইভাবে এরা চারবার খোলস বদলায়। পূর্ণাঙ্গ শূককীট প্রায় দুই ইঞ্চি লম্বা হয় এবং তিনটি খণ্ডে (মস্তক, বক্ষ ও উদর) বিভক্ত থাকে। এদের বক্ষে তিন জোড়া এবং উদরে পাঁচ জোড়া পা থাকে। দেহের পার্শ্ব বরাবর দশ জোড়া শ্বাস-ছিদ্র থাকে।

চতুর্থবার খোলস বদলানোর পর এরা খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং মূককীটে পরিণত হতে শুরু করে। পূর্ণাঙ্গ মূককীটের দেহের ভিতরে একটি লম্বা রেশম গ্রন্থি থাকে। গ্রন্থিতে থাকে এক প্রকার রস। নালী দিয়ে এ রস মুখের বাইরে আসে। নালীর নাম স্পিনারেট (Spinneret)। বাতাসের সংস্পর্শে রস শক্ত হয়ে যায়। এরা এই সময় মিনিটে প্রায় ৬৫ বার মুখ ঘুরিয়ে রস দিয়ে দেহের চারপাশে আবরণ তৈরি করে। ধীরে ধীরে এই আবরণ শক্ত খোলসে পরিণত হয়। এই আবরণসহ মূককীটকে গুটি (Cocoon) বলে। রেশম পোকার এই পরিবর্তনকে মেটামোর্ফোসিস (Metamorphosis) বলে। এই সময় এদের দেহের আকার ছোটো হয়ে যায়।

প্রায় ১০ দিন মূককীট দশায় থাকার পর, এদের দেহ থেকে এক প্রকার রস নিঃসৃত হয়। এই রস খোলসের একটি প্রান্ত গলিয়ে ফেলে। এরপর এরা গুটি কেটে বাইরে বেরিয়ে আসে। এই সময়ই রেশম পোকা তার জীবনচক্রে পূর্ণাঙ্গ মথ দশা পায়। মথ দশায় রেশম পোকার দেহ মাথা, বক্ষ ও উদরে বিভক্ত থাকে। মাথায় এক জোড়া পুঞ্জাক্ষী ও এক জোড়া এন্টেনা থাকে। এর বক্ষস্থলের দুই পাশে চারটি (২ +২) পা থাকে। এছাড়া অঙ্কীয় দেশের দুই পাশে থাকে। ৬টি (৩+৩) পা থাকে। গুটি কেটে পুরুষ মথগুলো আগে বেরিয়ে আসে। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় স্ত্রী-পুরুষ মথ যৌন মিলনে অংশ নেয়, একটি গুটিতে ৪০০ – ৫০০ গজ সুতা থাকে। এরপর পুরুষ পথটি মারা যায়। আর স্ত্রী মথ ডিম পাড়ার পর মারা যায়।

◼রেশমগুটি থেকে রেশম সুতা সংগ্রহ:

শূককীট দশা শেষ করে রেশম পোকা তার খাওয়া বন্ধ করে। সাধারণত রেশম লার্ভার মুখগহ্বর দিয়ে একপ্রকার প্রোটিন জাতীয় পদার্থ ক্ষরিত হয় যা পরিবেশে বাতাসের সংস্পর্শে এসে শক্ত হয়ে যায়। এই লালা দিয়ে লার্ভাগুলো নিজের চারদিকে আবরণ তৈরী করে, একেই কোকুন বলে। সেরিসিন নামক পদার্থ দিয়ে কোকুনের সুতা সদৃশ পদার্থ লেগে থাকে। কোকুন দেখতে অনেকটাই ডিম্বাকার এবং সাধারণত সাদা রঙের হয়ে থাকে। সিল্ক উৎপাদনের জন্য কোকুন তৈরীর এই ধাপই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন

পরিপূর্ণ কোকুনকে এরপর রঙ ও আকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় এবং শেষে গরম পানিতে সিদ্ধ করা হয়। কয়েক মিনিট সিদ্ধ করার পর কোকুনগুলো উঠিয়ে আনা হয় এবং ডিসেক্টিং নিডল (Dissecting Needle) দিয়ে কোকুন থেকে সুতার মূলপ্রান্ত বের করা হয়। একবার সুতার প্রান্ত পেয়ে গেলে সেটা ধরে আস্তে আস্তে টান দিলেই অবিচ্ছিন্ন সুতার আকারে সিল্ক বের হয়ে আসে। উল্লেখ্য প্রাকৃতিক ফাইবারের মধ্যে সিল্কই একমাত্র ফাইবার যা অবিচ্ছিন্ন এবং প্রতিটি কোকুন থেকে একটি সুতাই পাওয়া যায় যদি ছিড়ে না যায়।

Writer
Farzana Akter Keya
SKTEC - YE
Executive Ambassador - Latest Textile

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ