ভালোবাসার ক্যাম্পাস Shyamoli Textile Engineering College এর অসংখ্য স্মৃতিবিজড়িত মূহুর্তের মধ্যে থেকে কিছু স্পেশাল মূহুর্ত তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা,
★★Mohammad Sani Abed Utsho:-
ক্যাম্পাসের প্রতি ভালোবাসাটা যেন এই ক্রান্তিকালে এসে হারে হারে টের পাচ্ছি।
এতটা দিন ক্যাম্পাস থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর প্রতিনিয়তই মরিয়া হয়ে পড়ছি প্রাণের ক্যম্পাসটাকে সবার পদচারনায় আবার মুখোরিত হতে দেখব বলে। তবে কয়েকদিন যাবত গতবারের রমজান মাসের কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে। এইত... এমন দিনেই দিব্বি পনের রমজান পর্যন্ত ক্লাস করে বাড়ি ফিরছিলাম সবাই, সবার মঝেই বাড়ি ফেরা নিয়ে বিপুল তাড়না কাজ করতেছিলো।
বলতে গেলে নিজেকে খুব ভালোভাবেই সেটেল করে নিয়েছিলাম ওই যান্ত্রিক শহরের নিয়মে কিন্ত তারপরেও রমজান আসলেই যেন বাড়ি ফেরার জন্য মনটা ছটফট করে উঠতো। শুধু ভাবতাম কবে বাড়ি যাব! কবে বাড়ি যাব!
আর এবার ? ঘরে বসে সেই যান্ত্রিক শহরের স্মৃতিচারন করছি। প্রতিদিন সেহেরির জন্য সবার সবাইকে ডেকে তোলা, নামাজ পড়া, সারাদিন ক্লাস, ল্যাব শেষ করে সূর্যাস্তের লগ্নে এসে সবাই মিলে ইফতারের আয়োজন... এসবকিছুই যেন বার বার মনের মধ্যে ভেসে আসছে!
আমি স্বভাবত ই হাসি-ঠাট্টা পছন্দ করি, ক্লাসের এমন কেউ হয়ত নেই যার কোন না কোন ব্যঙ্গাত্মক ছবি আমার কালেকশনে নাই। প্রতিদিনের অনিশ্চয়তার সঙ্গে সবার সাথে আবার ক্লাস করা হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠা কিংবা লাইব্রেরিতে বসে সবাই মিলে হুমড়ি খেয়ে ল্যাব রিপোর্ট লেখার আক্ষেপ যেন প্রতিটা দিন বেড়েই চলেছে।
তবে শেষমেশ একটা জিনিসই বলতে চাই, অনেক ক্ষতি হলেও এক "করোনা" কিন্তু মানুষকে অনেক কিছু দেখিয়ে দিলো। পরিবারের সাপোর্ট কতোটা মূল্যবান, মানুষের সাথে সাথে পরিবেশেরও বেড়ে ওঠা যে কতোটা জরুরি.. আর ? আর সারাবছর যেই লাইফটা থেকে পালানোর চেষ্টা ঐ লাইফটাই যে কতোটা প্রিয় সেটাও বুঝিয়ে দিয়ে গেল এই এক ভাইরাস।
★★J I Jahid Chowdhury :-
এটা আমাদের ক্যাম্পাস,ভালোবাসা তো আমাদেরি..তাই না???এ যেন এক গর্বের বিষয়। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ ক্যাম্পাসকে ভালোবাসে।সফলতার পাহাড়ে যতদূর উঠা হোক না কেন জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে নিজের ক্যাম্পাসকে মিস করাটাই স্বাভাবিক। দেশের এই দূর্যোগকালীন সময়ে আমরা সবাই এখন ঘরবন্দী,আর এই সময়ে ক্যাম্পাসের স্মৃতি গুলো যেন এক এক করে মনে পড়ে।ক্যাম্পাসের প্রথম দুই বছর সকাল আট টা থেকে ক্লাস করা লাগতো,ঘুম থেকে উঠেই ক্লাসে চলে যেতাম।তৃতীয় বর্ষে অবশ্য দুপুর দুইটা থেকে ক্লাস করার সুযোগ পাই।কিন্তুু স্যারদের ভালোবাসায় যেকোনো সময়েই আমাদের ক্লাসে যাওয়া লাগতো,কখনো বা ল্যাব ক্লাসের জন্য,এইতো কিছুদিন আগেও ল্যাব ক্লাসে দশ মিনিট দেরি করার জন্য ল্যাব ক্লাসটা করতে পারি নাই।
এছাড়াও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া,গল্প করা,একসাথে বসে চা খাওয়া,ল্যাব নিয়ে ব্যাস্ত থাকার দিনগুলো মনে পড়ে।আশা ছিল খুব দ্রুত পড়াশোনা শেষ করে জবে ঢুকবো,ফ্যামিলি কন্ট্রিবিউট করবো।সেটা হয়তো এই ভাইরাসের কারনে আরেকটু লম্বা হয়ে গেলো।যাই হোক এই আবেগময়ী দিনগুলোর কথাই মনে পড়ে।
এই বছর খুব বেশিদিন ক্লাস করতে পারি নাই,বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় আমাদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হয়েছে।আশা করি খুব দ্রুত আবার সবকিছু ঠিক হয়ে আসবে।আমরা আবার আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে পারবো।এটাই প্রত্যাশা করি।
★★Hridoy Miah :-
ক্যাম্পাস! প্রিয় ক্যাম্পাসের কথা মনে পরলে বুকের বা পাশ টা নাড়া দিয়ে ওঠে। কতো স্মৃতি বিজরিত ক্যাম্পাস টাকে খুব মনে পরছে। মনে পরছে ২০ মিনিটের টিফিনে বন্ধুরা মিলে রুটির সাথে সবজি ভাগ করে খাওয়ার কথা। রনি স্যার, মাসুদ স্যার, আর খলিল স্যারের ক্লাস ৷ সব চেয়ে বেশি মনে পরে মাসুদ স্যারের ল্যাবের কথা৷ খুব মনে পরে চায়ের দোকানের মামার কথা৷ মামাকে বলতাম মামা আামার টায় চিনি আর আদা বেশি করে দিও। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসের প্রতিটা মূহুর্তে মনের মাঝে গেঁথে আছে, তাইতো প্রানের প্রিয় ক্যাম্পাস টাকে অনেক বেশি মিস করছি।
★★G.M. Abir Hossain :-
ক্যাম্পাসের কথা মনে হলেই আমাদের সবার চোখের সামনে ভেসে উঠে ক্লাসরুম,ল্যাব, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, হল, ক্যান্টিন আরো কতো কী!
ক্যাম্পাসিয়ানদের চোখে ক্যাম্পাস হলো স্বপ্নের মতো।আর এই কোয়ারেন্টিনের দিনগুলোতে সেই স্বপ্নগুলোকেই মিস করছি চরমভাবে। প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আটটার আগেই ক্লাসে প্রবেশ করা, ক্লোজ ফ্রেন্ডরা একসাথে বসার জন্য সিট দখল করার হুড়োহুড়ি,ক্লাস শেষে বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, বিশেষ করে ক্লাস ব্রেকে টং এ বন্ধুদের জমজমাট চায়ের আড্ডাটা আজ মিস করছি ব্যাকুলভাবে। কবে আবার বন্ধুরা একসাথে টং এ বসে চায়ের কাপে চুমুক দিবো বাসায় বসে সেইদিনের প্রহর গুনছি।
এছাড়াও ক্যাম্পাসে ডোকার প্রবেশপথে ব্রেকফাস্টের জন্য সালামী হোটেলের ২৫ টাকা প্লেটের খিচুড়ির স্বাদটাও আজ মিস করছি খুব ভালোভাবে। আর রমজান মাসে ক্যাম্পাসের সকল সিনিয়র জুনিয়র মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিবছর যে ইফতার মাহফিলের আয়োজন হতো সেটাও এবছর মিস করছি দারুণভাবে।
করোনার দুর্যোগ শেষ হবে, আবার ক্যাম্পাস সবার পদচারণায় মুখরিত হবে,ক্যান্টিন জমে উঠবে ক্যাম্পাসিয়ানদের আড্ডায় সেই আশা বুকে নিয়ে প্রতিটি দিন পার করছি।মিস করছি লাল ইটের প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসকে।
বন্ধুরা সব কে কোথায় তোদের মনে পড়ে,
হোটেল আর টং এ চা নাস্তা খাবারটা সেরে
পড়ালেখা, গালগল্পে সকাল দুপুরে,
সেইসব দিনগুলি মোর আবার আসবে কবে ফিরে।
★★ Golam Sarwer Mithun
❤বন্ধুত্ব❤
বন্ধু,এটা হচ্ছে ভালোবাসার আর এক নাম।বন্ধু ছাড়া জীবনের পথ চলা অসম্ভব।
আমার এখনও মনে আছে,যখন আমি প্রথম ক্যাম্পাসের আঙিনায় পা রেখেছিলাম,তখন নিজেকে বড্ড একা একা লাগত।মনে হতো এই একাকীত্বতা নিয়ে কিভাবে চারটি বছর পার করব।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে এটাই আমার পরিবার।
প্রাচীন রুপকথায় আছে বন্ধুত্বের কথা। সেই রুপকথায় আছে প্রকৃতির চন্দ্র ও সূর্যের নাকি বন্ধুত্ব ছিল খুব। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব নাকি স্থায়ী হয়নি। কারণ ওই একটাই, সেটা ক্ষমতার দাম্ভিকতা। সূর্য বলেছিল সে ছাড়া চাঁদ অন্ধকারে। চাঁদ ক্ষেপে গিয়ে বলেছিল সূর্যের কেবল যে প্রখরতাই আছে, সেসব কথা। সূর্য নাকি রাগ করে একগাদা তপ্ত বালি ছুড়ে মারল চাঁদের মুখে। কালচে গভীর দাগ হয়ে গেল তার ফলে। সেগুলোই হচ্ছে চাঁদের কলঙ্ক। কোনোদিনই তা মুছে যাওয়ার নয়। এই যে সেই প্রাচীন কালের রূপকথা, এখানেও বন্ধুত্বের কথা জানা যায়। আবার মহাকাব্য ‘ইলিয়াডে’ মাইসিনির রাজা ও গ্রিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আগামেননের বন্ধু ও বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা ছিলেন নেলেউসের পুত্র ও পাইলসের রাজা নেস্টর। যিনি ট্রয় যুদ্ধে গ্রিক বীর অ্যাকিলিসের সঙ্গে আগামেননের দ্বন্দ্ব ও ক্রোধ প্রশমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন প্রকৃত বন্ধুর মতো। অন্যদিকে টেলেমেকাসের পিতার ভালো বন্ধুর কথা আরেক মহাকাব্য ‘ওদিসি’তে পাওয়া যায়।
প্রথম প্রথম একা একা বোধ করলেও যখন সবার সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে জড়িয়ে গেলাম,তখন ওদের সাথে আড্ডা,খুনসুটি না হলে ক্যাম্পাসের ক্লাসগুলো জমে উঠত না।ল্যাব রিপোর্ট তৈরি করা,অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়া-এসব ক্ষেত্রে ওদের ভূমিকা অতুলনীয়।তাছাড়া এখন আর আমার কাছে কোনো বিপদই বিপদ মনে হয় না,কারণ আমি জানি আমার ভালোবাসার বন্ধুগুলো সবসময় পাশে আছে এবং থাকবে।
কিন্তু এখন বড্ড একা একা লাগছে।করোনা মহামারীর কারণে আজ পুরো বিশ্ব স্তব্ধ,আঁধার নেমে এসেছে এই পৃথিবীতে।যার দরুন সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে।সকলের থেকে এখন বহুদূরে রয়েছি,কিন্তু মনটা এখনও পড়ে রয়েছে নিজের প্রিয় ক্যাম্পাসে,প্রিয় বন্ধুদের কাছে।ওদের সাথে দেয়া আড্ডা,ওদের সাথে করা খুনসুটি-এগুলো যখনই মনে পড়ে তখনই ভিতরটা নাড়িয়ে দেয়।
জানিনা ওদের সাথে দেখা হবে কি না,জানি না আদৌ বেঁচে থাকব কি না,কিন্তু ওদের প্রতি ভালোবাসা থাকবে সর্বদা।যদি এই মহামারী কাটিয়ে উঠে পুরো বিশ্ব আবার নিজের আগের রূপ ফিরে পায় তবে ভালোবাসার বন্ধুদের সাথে আবার দেখা হবে প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসের আঙিনায়।
ততদিন পর্যন্ত সবাই ভালো থাকিস, সাবধানে থাকিস।
A literature By
ECA
Of
Shyamoli Textile Engineering College
Editor:
G.M. Abir Hossain
Committee Manager
0 মন্তব্যসমূহ