জগতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার (Textile Engineer) কি ও কেন?

 


Latest Textile | Hasan Mahadi

শিল্প প্রতিষ্ঠানের সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। একসময় যেখানে তাঁতে বুনে কাপড় তৈরি করা হত, এখন আর সেভাবে কাপড় তৈরি করে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। কারণ এর পুরো প্রক্রিয়াটাই ব্যাপক সময়নির্ভর। তাই এখানেও মানুষ সাহায্য নিচ্ছে যন্ত্রের।

সুতা থেকে পোশাক বানানোর এই প্রযুক্তিনির্ভর পুরো প্রক্রিয়াটিই বস্ত্র কৌশলের বিষয়। যেকোন আঁশ থেকে সুতা, বস্ত্র এবং রঙের মিশেল অধিকতর উপযোগী জিনিস বানানোর যে প্রযুক্তি এক কথায় তাই হলো বস্ত্রকৌশল। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমান সময়ের অনেকের কাছেই একটি পছন্দনীয় বিষয় এবং ইদানিংকালে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী বর্তমানে এই বিষয়ে বিদ্যা অর্জনে আগ্রহী।

বলাবাহুল্য পোশাক রপ্তানি আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কী?

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে সম্পূর্ন ম্যানুফ্যাকচারিং বেসড একটি প্রসেস যেখানে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে মেশিন সেটাপ থেকে শুরু করে প্রসেস কন্ট্রোল, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট , গিয়ার মেকানিজম এবং মেইন্টেনেন্স নিয়ে কাজ করতে হয়। স্পিনিং এর ইঞ্জিনিয়ারদের প্রোগ্রাম ইনপুট দেয়া জানতে হয়। ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রথম সারির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়।

নাসার বিজ্ঞানিরা যারা দীর্ঘদিন যাবত মহাকাশে মানুষ পাঠাতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা অসংখ্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের গবেষনায় নিযুক্ত করে স্পেস স্যুট এবং ন্যানোফাইবার, কার্বন ফাইবারের শিল্ড তৈরীর জন্য। শুধু তাই নয়, কাপড়ের মান, রংয়ের ধরন, রংয়ের স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত করাও বস্ত্র প্রকৌশলীর কাজ।

পোশাক কারখানা ছাড়াও বাংলাদেশ স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, নিট ডাইং, ডাইং ফিনিশিং, ইয়ার্ন ডাইং সব মিলিয়ে হাজারেরও অধিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কাজের মান নিয়ন্ত্রণের জন্যও একজন বস্ত্র প্রকৌশলীর প্রয়োজন।

Textile Technology

চাকরির ক্ষেত্র:

বস্ত্র প্রকৌশলীদের চাকরির বাজারে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো -তাদের পেশা জীবন অনিশ্চিত নয়। শুধু রপ্তানি খাতে সিংহভাগ বস্ত্র জোগানোই নয়, দেশের বস্ত্র চাহিদা পূরণের জন্যই বস্ত্র প্রকৌশলীদের নানা জায়গায় রয়েছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ।

অনেকে মনে করেন, বস্ত্র কৌশলীদের চাকরি শুধু টেক্সটাইল মিলগুলোতেই সীমাবদ্ধ


শুধু টেক্সটাইল মিল নয়, তাদের চাকরির সুযোগ রয়েছে মন্ত্রণালয়, ব্যাংক, কাস্টমস, বিনিয়োগ বোর্ড, বিসিক, বিজিএমইএ, বিজিএম, জুট, রিসার্চ, তুলা উন্ন্নয়ন বোর্ড, রেশম বোর্ড, বিএমবিআই, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট, ডিজাইন, টেক্সটাইল টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি ইন্স্যুরেন্স, বায়িং হাউস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে। ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বস্ত্র প্রকৌশলীদের অপ্রতুলতার কারণে এ পেশায় রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। এছাড়াও বস্ত্র প্রকৌশলীরা ইচ্ছা করলেই পুঁজি সংগ্রহ করে নিজ উদ্যোগে স্থাপন করতে পারেন টেক্সটাইল মিল। একজন বস্ত্র প্রকৌশলীর উপার্জন মন্দ নয়। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা সাপেক্ষে এ পেশায় প্রতি মাসে ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

বস্ত্রকৌশলের অবদান:

বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে “মেইড ইন বাংলাদেশ” ট্যাগ এ ব্র্যান্ডিং শুরু করেছে। বিশ্বের ২য় বৃহত্তম জিন্স ব্র্যান্ড এইচএন্ডএম শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকেই বছরে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার মুল্যের পন্য নিয়ে থাকে।

ফুটবল বিশ্বকাপে গ্রেড ওয়ান জার্সি, ন্যাটোর ক্যামোফ্লেজ ড্রেস থেকে শুরু করে ডিজেল, রিবক, নাইকি, পুমা বেশিরভাগই নির্ভর করে না এই দেশের টেক্সটাইল প্রোডাক্ট এর উপর। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে টেক্সটাইল সেক্টরের পরবর্তি চীন হিসেবে ঘোষনা করেছে। যা সত্যিই গর্বের।

আরও পড়ুন


Writer:
Hasan Mahadi
Executive Ambassador - Latest Textile
Department of Textile Engineering
Shyamoli Textile Engineering College (STEC)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ