উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের পোশাক শিল্পের উন্নতি - IE

IE in Textile Industry

Latest Textile | Sanjida Afreen

প্রথমেই  আমরা জেনে নেই উৎপাদন ব্যয় কি এবং বলতে কি বুঝায়?

▶️ উৎপাদন ব্যয় হল লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণীবদ্ধকরণ, বিশ্লেষণ, সারসংক্ষেপ, একটি প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত খরচ বরাদ্দ করার প্রক্রিয়া এবং তারপরে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি উন্নয়ন করা। এছাড়াও বলা যায় যে, কোন দ্রব্য  উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরনের জন্য যে দাম দিতে হয় তাকে উৎপাদন ব্যয়  বলা হয়।

উৎপাদন খরচে শ্রম, কাঁচামাল, উপভোগযোগ্য উৎপাদন সরবরাহ এবং সাধারণ ওভারহেডের মতো বিভিন্ন ব্যয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। পণ্য ব্যয়গুলি কোনও গ্রাহকের কাছে পরিষেবা সরবরাহের অংশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সরকার কর্তৃক প্রদেয় ট্যাক্স বা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণকারী সংস্থাগুলি কর্তৃক প্রদত্ত রয়্যালটিও উৎপাদন ব্যয় হিসাবে বিবেচিত হয়।

▶️ এবার  পোশাক শিল্পের সাথে  উৎপাদন  ব্যয়ের সম্পর্ক জানা যাক-

পোশাক শিল্পের সাথে উৎপাদন ব্যয়  অতোপ্রতো ভাবে জড়িত। তৈরি পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণ বাংলাদেশের সমাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করেছে। পরোক্ষভাবে এই সব সেবাখাতে বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখেরও  আরও  বেশি  মানুষের কর্মসংস্থান হয়। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ছাড়াও তৈরি পোশাক শিল্প সাড়ে ২২ লাখেরও বেশি  নারী শ্রমিকের জীবনযাত্রার লক্ষণীয় পরিবর্তন সাধন করেছে এবং তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। পোশাক শিল্প মূলত উপচুক্তি ভিত্তিক। অর্থাৎ বাংলাদেশি উদ্যোক্তা বিদেশি ক্রেতার উপচুক্তিকারক বা মূল চুক্তির অংশ বিশেষ সম্পাদন করে।

বাংলাদেশকে এখন অনেক শক্তিশালী দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তন্মধ্যে পণ্য এবং বাজার বহুমুখীকরণ, অবকাঠামোগত অসুবিধা দূরীকরণ, পণ্য সরবরাহে ক্ষমতা বৃদ্ধি, উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে কৌশল গ্রহণ এবং পশ্চাৎ সংযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি ইত্যাদি।

▶️ এখন মূল বিষয়ে আসি, উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের পোশাক শিল্পের উন্নতির উপায়:
আয় বুঝে ব্যয় করা যেমন একটি চিরন্তন উপদেশবানী তেমনি Garments Manufacturing এ বেশি করে profit  করার জন্য production costing কমানো খুব জরুরি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে ভিয়েতনামের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান৷ এই বাজারের শতকরা ৬ ভাগই নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশের কারখানাগুলো৷ কিন্তু এই অবস্থান ধরে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে৷ তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম এ বছর চীনকে টপকিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে তাহলে দেখা যাচ্ছে অন্যদের সাথে বাংলাদেশকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷

কিন্তু দুঃখজনক  এই যে গত বছরে  থেকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমছে৷ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট আকারের কারখানা৷ কাজ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা৷ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, চাহিদা কমা এবং পোশাকের দাম না বাড়ায় চাকরিচ্যুত  হচ্ছে শ্রমিকরা,কারখানা বন্ধ হয়ে  গেছে অনেক।
বিবেচনায় দেখা গেছে এইসব কিছুর একটাই সমাধান তা হল  কম খরচে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। এবং এই  ব্যাপারে বাংলাদেশ  যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে  কিভাবে উৎপাদন  বাড়ানো  যায়  আমাদের টেক্সটাইল শিল্পের  উন্নতির জন্য।

▶️ Production Cost কিভাবে কমানো যায় সেইরকম কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবঃ

Improve labour productivity (শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন) Labour Productivity বাড়ানোর ফলে আপনি প্রতি পিস garments এর উৎপাদন খরচ এবং overhead cost কমাতে পারবেন। জনপ্রতি প্রতিদিন যেই পরিমান Garments উৎপাদন হয় তাকেই Labour Productivity বলে।মাসিক Overhead Cost মোটামুটি সমান থাকে। সুতরাং বর্তমান থেকে বেশি করে উৎপাদন করতে পারলে Overhead Cost আনুপাতিক হারে কমে যাবে।

Proper  Utilization of Manpower (মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহার) লাইন ব্যলেন্সিং এর মাধ্যমে অপারেটরদের সঠিকভাবে ব্যবহার বাড়ানো এবং অনুৎপাদনশীল সময় Eliminate করা অথবা Lost Time কমানো।

Produce Right first time quality (প্রথম চান্সেই ভাল quality garments উৎপাদন)প্রথমবারেই ভাল quality পোষাক উৎপাদনের অভ্যাস উন্নত করতে হবে।এইভাবে আপনি নিম্ন গুনগতমানের জন্য যে বাড়তি খরচ হত তা কমাতে পারবেন এবং একইসাথে productivity ও Lead Time এর উন্নতি করতে পারবেন। 

Alteration এবং Repair এর কাজ করতে অপ্রয়োজনীয় সময় বাচিয়ে অন্য কোন  উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে পারবেন।

Reduce overhead cost as much as possible (পরোক্ষ উৎপাদনশীল খরচগুলো যতটুকু কমিয়ে ফেলা) মাঝে মাঝেই আপনার ফ্যক্টরির Overhead cost নিয়ে Analysis করুন। অপ্রয়োজনীয় মানবসম্পদ নিয়োগ করবেন না।

Training Operator (অপারেটরদের প্রশিক্ষন) অপারেটরদের দক্ষতার উন্নতি করতে তাদের প্রশিক্ষন দেওয়া।

Motivating Operator (অপারেটরদের উৎসাহ প্রদান) অপারেটদের তাদের কাজকে আনন্দের সহিত সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে উৎসাহ প্রদান করা যেতে পারে।

Keep your fabric and trim store organized (ফেব্রিক,এক্সেসারিজ এবং ট্রিমস গোছালোভাবে সংরক্ষন করা) গোছানো থাকার ফলে আপনার কর্মীদের সময় অপচয় কমে যাবে।এটা আপনাকে ট্রিমসের (Thread, Button, Lining, Packing Materials etc.) অপ্রয়োজনীয় অপচয়ের হাত থেকে বাচাবে।

ইনভেন্টরি রেকর্ড চালু রাখা এবং উৎপাদনের প্রতিটি স্তরে তা প্রয়োগ করা। এটা আপনাকে কাচামাল আগের থেকে সংরক্ষন করতে সাহায্য করবে এবং  অপ্রয়োজনীয়  জিনিস কিনা থেকে বিরত থাকবে। 

গার্মেন্টস ম্যনুফেকচারিং এ K.P.I (Key Performance Indicator) or Metrics বলে একটা ব্যাপার আছে। এর মধ্যে খুবই critical  কিছু Metrics আছে যা প্রত্যকটি কোম্পানিকে অনুসরণ করা উচিত।

কোম্পানিতে Metrics বা K.P.I অনুসরন করে নাটকীয়ভাবে  ফলাফলে উন্নতি করতে পারবে পোশাক শিল্পগুলো।

▶️ পরিশেষে বলতে চাই যে, বিশ্বব্যাপী বস্র ও পোশাক  শিল্প এখন এক সন্ধিক্ষনে।উন্নয়নের জন্য বস্র ও পোশাক শিল্পকে অতিরঞ্জন করা যাবেনা।তাই বস্র ও পোশাক শিল্পের সামাজিক ও পরিবেশগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের উন্নয়নের সিড়িতে আরোহণের সাথে সাথে ভবিষ্যতে লাভবান  পেতে হলে আামাদের পোশাক শিল্পগুলো যদি উপরের উল্লেখিত উপায়গুলো পালন করে তাহলে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সক্ষম হবে তারা এবং একদিন  আমাদের বাংলাদেশও পোশাক শিল্পের দিক দিয়ে শীর্ষস্থানে অধিকার করবে ইনশাআল্লাহ। 

Writer
Sanjida Afreen
Department of Industrial Engineering
BGMEA University of  Fashion and Technology (BUFT)

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ