মিলিটারি এবং ডিফেন্স এ টেক্সটাইল এর ব্যবহার - Textile in Military

Textile in Military

Latest Textile | Mohammad Sani Abed Utsho

মিলিটারি কিংবা সামরিক বাহিনীর নাম শুনলেই সবার আগে যে জিনিসটা আমাদের মাথায় আসে তা হলো অস্ত্র সামগ্রী আর হরেকরকমের গ্যাজেট যার ব্যবহার শুধুমাত্র আর্মিদের জন্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
বে এসব কিছুর বাইরে আরও অনেক জিনিস থাকে যা একজন সৈনিককে পরিপূর্ণ করে তোলে। আর তার মধ্যে অন্যতম হলো পোষাক, যেটা সরাসরি টেক্সটাইলের সাথে সংযুক্ত।

আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে ওতপ্রোতোভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের পরিধেয় পোষাক। জাতি কিংবা দেশ ভেদে এর মধ্যে আছে হাজার রকমের ভ্যারিয়েশন। কেউ তুলার তৈরি কাপড় পরে অভ্যস্ত তো কেউ রেশমি কাপড়ের রেশম ছোয়ায়, কেউবা আবার উলের তৈরি গরম কাপড়ে পরম সাচ্ছন্দ্যে মানিয়ে নেয় নিজেকে। তবে সামরিক বাহিনীর পোশাক? তাদের পোষাকে কিন্তু আছে আমাদের পরিধেয় পোষাকের তুলনায় বিস্তর তফাৎ।

একজন সৈনিকের দৈনিক ট্রেইনিং এবং তাদের লাইফস্টাইলের সাথে ম্যাচ করে তৈরি করা হয় তাদের পোষাক। আর এই জন্য জনসাধারণের পোষাকের তুলনায় তাদের পোষাকগুলো অধিকতর শক্তপোক্ত হওয়া লাগে। তেমনিভাবে তাদের পোষাকে আছে বিভিন্ন রকমের ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজ যা তাদেরকে করে তোলে সবার চেয়ে আলাদা। এছাড়া বর্তমানে ন্যানো টেকনোলজির সুবাদে হরেক রকমের টেকনোলজিক্যাল ফিচার এসব পোষাকের মধ্যে যোগ হচ্ছে আর এগুলো বিভিন্ন ভাবেই সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এ ক্ষেত্রে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করছে ন্যানো টেকনোলজি।

টেক্সটাইল ইতিহাসের ১৫টি বিস্ময়কর তথ্যাবলী (ছবিসহ)

🔷 ন্যানো টেকনোলজি কি?
ন্যানো টেকনোলজি হলো, কোন পদার্থকে আণবিক পর্যায়ে পরিবর্তনের এবং নিয়ন্ত্রনের বিদ্যা। একে সংক্ষেপে ন্যানোটেক ও বলা হয়। সাধারণত ন্যানো টেকনোলজি এমন সব কাঠামো নিয়ে কাজ করে যা অন্তত একটি মাত্রায় ১০০ ন্যানোমিটার থেকে ছোট। এর সবচেয়ে বড় এডভান্টেজ হলো এটি ব্যবহার করে অনেক সূক্ষ্ম সংবেদনশীল সেন্সর তৈরি করে সম্ভব হচ্ছে যা ফেব্রিকের অংশ হিসেবেই ফেব্রিকের মধ্যে ব্যবহার যায়। এসব সেন্সরের একীভূত করনের ফলে আমরা পাচ্ছি "স্মার্ট টেক্সটাইলস"। সংবেদনশীল ফেব্রিক তার একটি চমৎকার উদাহরণ। এই সংবেদনশীল ফেব্রিক মানুষের স্পর্শ থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছুরই জানান দিয়ে দিতে সক্ষম।

🔵 সংবেদনশীল ফেব্রিক
আপনি হয়ত ভাবছেন সংবেদনশীল পোশাকে সামরিক বাহিনীর কি লাভ! সত্যি বলতে সংবেদনশীল পোষাক সেনাবাহিনীদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ, এই প্রযুক্তির ছোয়া তাদেরকে দিয়েছে নতুন এক মাত্রা। টেক্সটাইল শিল্পের মধ্যে কিছু টেক্সটাইল আছে যা নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় আর এদের বলা হয় "টেকনিক্যাল টেক্সটাইল"। সামরিক খাতে যেমন এই টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের ব্যবহার রয়েছে তেমিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল, মেডিকেল, এরোস্পেস মতো আরও অনেক খাতেও এর বিস্তর ব্যবহার দেখয়ে পাওয়া যায়। সামরিকের ক্ষেত্রে মূলত তাদের পোশাকের মধ্যে কিছু বিশেষ গুণাবলি সংযুক্ত করে দেয়ার জন্যে এই টেকনিক্যাল টেক্সটাইল ব্যবহৃত হয়।


🔷 টেকনিক্যাল টেক্সটাইলের কিছু অবদান
এক্ষেত্রে ফেব্রিক গুলা আলাদা ভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে এগুলা একজন সৈনিককে প্রতিকূল পরিবেশ, আকস্মিক শরিরের নড়াচড়া, ধ্বংসাত্নক নিউক্লিয়ার অথবা কেমিক্যাল রিয়্যাকশন সহ সব রকমের প্রতিকুল অবস্থা থেকে রক্ষা করতে পারে। টেক্সটাইলের এই খাতের অবদান কিন্তু এখানেই শেষ না! যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদের জীবন রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখাতে এসব টেক্সটাইলের গুরুত্ব ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।

🔷 ডিফেন্স সেক্টরে টেক্সটাইলের বিস্তারঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এই খাত ব্যপক পরিবর্তন এবং বিস্তার লাভ করেছে। আর বর্তমানে ফেব্রিক টেকনোলজির অগ্রগতির ফলস্বরূপ সৈনিকদের পোষাকের মধ্যে এসেছে বিস্তর পরিবর্তন। বর্তমানে মিলিটারি পোষাক গুলো শুধুমাত্র রক্ষার কাজেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এটি তাদের যুদ্ধের একটি অপরিহার্য সরঞ্জাম হয়ে গেছে।

প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত পোষাক কিংবা সরঞ্জাম ছাড়াও প্যারাসুট, দড়ি কিংবা তাবু বানানোর ক্ষেত্রেও টেক্সটাইলের ব্যবহার দেখা যায়। এই সব টেক্সটাইলকে একত্রে "মিলিটারি টেক্সটাইল" বলা হয়। আধুনিক নেভি ড্রেস গুলা তৈরি করা হয় বিশেষ একধরনের ফেব্রিক দিয়ে যার মধ্যে থাকে Micro Denier ফাইবার আর এটা একটা সিনথেটিক ইয়ার্ন। সাধারনত "Bi-Component polyester-nylon Polymer" অথবা "100 Polyester polymer" এর অনেক গুলা ফিলামেন্ট একত্রে প্রোসেস করে এই ইয়ার্ন তৈরি করা হয় যাকে অবশেষে ফেব্রিকের রূপ দেয়া হয়। আর এই ফাইবার দিয়ে তৈরি নেভি পোষাক গুলা ভাঁজ হয়ে থাকেনা আর এরই সাথে এগুলা হয় ডাস্ট-প্রুফ যায় কারনে পোষাক সাদা রাখা হয়ে যায় অনেক সহজ।

🔷 ন্যানো টেকনোলজি মূলত ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রির পোষাক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এই টেকনোলজির ব্যবহারের মাধ্যমে এমন ছদ্নবেশি পোষাক তৈরি সম্ভব যা পোষাকের ডিজাইন এবং রং পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম। অর্থাৎ, এই পোষাক যুদ্ধক্ষেত্রের চারিদিকের পরিবেশের সাথে একজনে সৈনিকের পোষাককে মিশিয়ে দিতে সক্ষম যা একজন সৈনিককে যুদ্ধক্ষেত্রে ছদ্নবেশ ধারনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। "Chameleonic Camouflage" হলো এর মধ্যে একটি। এই ক্যামোফ্লেজ এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এটি একজন সৈনিক যেই পরিবেশে দাড়িয়ে আছে ঠিক সেই পরিবেশের সাথে মিশিয়ে দিতে সক্ষম।

হয়ত ভাবছেন পরিবেশের সাথে মিশিয়ে দিলে কি হবে? আল্ট্রা ভায়োলেট কিংবা ইনফ্যারারেড রশ্নি তো আছেই! এগুলার মাধ্যমেই তো তার পজিশন বের করে নেয়া যাবে।
না, আপনি ভুল। এসব টেক্সটাইল একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে আল্ট্রা ভায়োলেট কিংবা ইনফ্যারারেড রশ্নি থেকেও একজন মানুষকে আড়াল করতে সক্ষম বলে প্রমান পাওয়া গেছে।

র্তমানে নতুন প্রযুক্তির ফাইবার গুলা ন্যানো-টেকনোলজির মাধ্যমেই তৈরি করা হয় যা একজন সৈনিকের পেশি শক্তি বাড়াতে সক্ষম। আর এর ব্যবহারের ফলে একজন সৈনিক শ্রমসাধ্য কাজের ক্ষেত্রে অধিকতর শক্তি প্রয়োগে সক্ষম হবে। এছাড়া শতভাগ ছিদ্রহীন প্যারাসুট ফেব্রিক তৈরি করা হয়েছে যা অধিকতর ধারনক্ষমতা সম্পন্ন এবং দূর্দান্ত দক্ষতা আর সুরক্ষার সঙ্গে সঞ্চালনে সক্ষম।

সামরিক খাতে টেক্সটাইলের এসব সফলতা খুলে দিয়েছে নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার যার ফলে আরও অনেক নতুন নতুন গবেষনার সূচনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। আর এর উদ্দেশ্যে শুধু একটাই, সামরিক পোষাককে একটি চূড়ান্ত রূপদান করা। এরই অবদানে আধুনিক সামরিক পোষাক গুলো আগের তুলনায় ওজনে অনেকখানি হালকা হয়ে গিয়েছে, আর তার সাথে সাথে এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে আদ্রতা শোষন, ধ্রুত শুকিয়ে যাওয়া, দাগ প্রতিরোধ সহ শরীরের গন্ধ নিয়ন্ত্রণের গুণাগুণ। সাধারনত সিলভার এন্টিমাইক্রোবিয়াল টেকনোলজি ব্যবহার করব ফেব্রিকের মধ্যে গন্ধ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়।

🔷 Demonstration of an E-Textile
একজন যোদ্ধা সাধারণত দশের অধিক ব্যাটারী বহন করে যা বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামের প্রাণশক্তিরূপে কাজ করে। এখান থেকেই বুঝা যায় যে তাদের একটি ভরষাযোগ্য পাওয়ার সোর্সের প্রয়োজন পরে যা তারা সহজেই যুদ্ধক্ষেত্রে পরিবহন করতে পারবে। এক্ষেত্রে এমন এক শক্তির উৎসকে কাজে লাগাতে হবে যা নবায়নযোগ্য এবং সহজেই ইউটিলাইজ করা সম্বভ। E-Textile এর ব্যবহারের মাধ্যমে এমন-ই এক বস্ত্রের পরিচয় ঘটানো হয়েছে যা দেখতে শরীরের চামড়ার মতোই এবং যায় মধ্য সূর্যের আলোকে ব্যবহার উপযোগী শক্তিতে রূপান্তরের ক্ষমতা রয়েছে।

টেক্সটাইল টেকনোলজি: Self Healing Fabric (ভিডিওসহ)

পরিশেষে আমরা দেখতে পাই যে মিলিটারি কিংবা সামরিক খাতে টেক্সটাইলের ভূমিকা অপরিসীম। আর প্রতিনিয়তই এটি সম্প্রসারিত হচ্ছে যার ফলে এই খাতে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনা। নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারনার প্রেক্ষিতে এগিয়ে যাচ্ছে এই টেকনক্যাল টেক্সটাইল। আর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য এখানে আছে অপার সম্ভাবনা। আমাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে আগামীর টেক্সটাইল।

আরও পড়ুন

লেখক
মোহাম্মদ সানি আবিদ উৎস
Executive Ambassador - Latest Textile
বি.এস.সি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ
শ্যামলী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (STEC)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ