বাজ
Latest Human | সুপ্তকর
(বাজ পর্ব ১) (প্রথম প্রকাশ ৭ই আগস্ট, ২০১৬)
ঘুম ভাঙল গাড়ির শব্দে... নতুন বাসায় আসার পর থেকেই এমন কুঅবস্থা। কয়েকদিন আগেও সকাল কাকে বলে জানতাম না। বয়স ৩০ পার হলে কি হবে আমিতো আর ৯টা-৫টা অফিস করি না, তাই ইচ্ছা হলেই এই পোড়ামুখী সকালের মুখ না দেখলে ও চলে। ঘুমে চোখ লেগে আসছে। চোখের ই কী দোষ বল, বিছানায় শুতে ঘুমাতে ৪টা বেজে গিয়েছিল, এখনতো মাত্র ৭টা বাজে! গার্মেন্স শ্রমিক আবাসিক এলাকাতে এ অবস্থাই হয় হয়ত!
সকালে কী খাব, খিচুরি খাব না কি রুটি! এ এলাকাতে তো কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ড দুরে থাক ভাল রেস্টুরেন্ট বা হোটেল ও নাই। কি আর করবো, কিছুই করার নাই এ অবস্থায়।
সকালের অনিবার্য কাজ গুলো শেষ করে বের হলাম কবুতর এর খোপের মত বাসা থেকে এক কানে হেডফোন লাগিয়ে।
স্যার, কি খাইবেন?
কি কি আছে আজ?
স্যার, রুটি, খিচুরি ছাড়া আরতো কিছুই এইহানে পাওন যাইবনা। সদরে যাওন লাগব!
বুঝলাম, এখন তাড়াতাড়ি রুটি ডিম দাও। খিদায় পেট জ্বলছে।
স্যার, এহনি দিতাছি। ত্যাল ছাড়া?
হ্যাঁ, বাসিঁ খাবার দিওনা আবার।
স্যার, ইমান নিয়া দোকান চালাই, চিন্তা কোইরেন না।
মনে মনে ভাবতে থাকি, ইমান সাথে নিয়ে কাজ করলেই কি শুধু ভালো কাজই করা যায়! হয়তো করা যায়, জানি না।
নাহ্, রুটি গরম টাটকাই আছে।
আজ কাল আর কাউকেই বিশ্বাস হায় না, তবে দোষটা আমারই, পেশা বা নেশাটাই যে এমন বেছেছি!
খাওয়া শেষ করে রাস্তায় বের হয়ে সোজা বাসস্টান্ড রওনা হলাম। নিজের কাছে ওয়ালেট আর ঘড়ি ছাড়া কিছুই নেই। বাসায় লুঙ্গি গামছা ছাড়া আরতো কিছুই নাই যা আবার ব্যাগে করে নিয়ে আসব। খোপের মত এই ফ্লাটটা ভাড়া নিয়েছি ৩ দিন আগে। মাস দুয়েক হয়তো কাটাতে হবে এখানেই।
বাসস্টান্ড এ পৌছাতে ৯টা বেজে গেল। রাজধানির টিকিট কাটতে যাব এমন সময়,
ম্যাডাম আপনাকে ডাকছে। কোন ম্যাডাম? ঐ কালো গাড়িতে। আচ্ছা, যাও আমি আসছি।
বুঝলাম টিকিট কাটা আর লাগবে না। তাই দোকান থেকে কিছু চুইংগাম কিনে এগিয়ে গেলাম গাড়ির দিকে। গাড়ির কাছে যাওয়াতেই ভিতর থেকে দরজা খুলে যে মুখটা দেখা গেল তা যথেষ্ট চেনা।
জানলে কি করে যে এখানে আমাকে পাবে?
যতই লুকানোরই চেষ্টা কর না কেন, এক্সক্যালি কই আছ তা না জানতে পারলে ও কোন এলাকাতে আছ তা তো খবর পাওয়াই যায়।
কই থাকি, তা আর বের করতে তোমাদের বেশি সময়
লাগবে নাকি!
হুম, তা লাগবে না। তবে তা করলে তো তোমার দেখা পেতাম না... আবার লুকাতে।
কাজের কথা বল।
কাজের কথাতো এখন ও বলছি, কিন্তু তুমি খেয়াল করছ না। বোঝার একটু ও চেষ্টা করছো না।
বোঝার দরকার নেই তাই চেস্টা করছি না। বুঝে কি লাভ বল, এই জীবনে সব বোঝার চেষ্টা করাও অপরাধ। এখন কাজে কথা বল।
হুম, কাজের কথা! কাজেরতো কোন কথাই নাই। এই নাও তোমার প্যাকেট।
কি আছে এতে?
জানি নাতো, I am just a transporter, now. বুঝেছ?
বুঝলাম।
আজ রাতে ফ্রি আছ?
কেন?
ডিনার করতাম এক সাথে।
না, তেমন সময় নাই। বিদায় মিস দিয়া।
মিস দিয়া!?! ডাক টা পছন্দ হল না!
আচ্ছা... দিয়া, বিদায়।
গুড বাই, অর্ণব.....
(চলবে...)
0 মন্তব্যসমূহ